ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ, কী হতে পারে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ?

পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে আমাদের একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩.৮ সেন্টিমিটার হারে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যদিও এটি কোনো হঠাৎ পরিবর্তন নয়, বরং কোটি কোটি বছর ধরে চলমান একটি ধীর ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
চাঁদ-পৃথিবীর দূরত্ব পরিমাপের জন্য বিজ্ঞানীরা মহাকাশযান ও নভোচারীদের স্থাপন করা আয়নার সাহায্যে পৃথিবী থেকে লেজার পাঠান। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনের সময় স্থাপিত প্রতিফলক ব্যবহার করে জানা যায় চাঁদের অবস্থান ও গতিবিধি।
কেন দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ?
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী স্টিফেন ডিকারবির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যকার জোয়ার-ভাটার শক্তি ও কৌণিক ভরবেগের কারণে এই দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে।
চাঁদের মহাকর্ষীয় টানে পৃথিবীর পানিতে জোয়ার সৃষ্টি হয়, এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির ফলে এই জোয়ারের স্ফীতি চাঁদের তুলনায় সামান্য এগিয়ে থাকে। এর ফলে চাঁদ কিছুটা “ঠেলতে” থাকে, যা তাকে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
এই প্রক্রিয়ায় চাঁদও পাল্টা টান সৃষ্টি করে, যা পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিতে একধরনের “ব্রেক” লাগায়। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরে ধীরে কমে আসে এবং প্রতিটি দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি শতাব্দীতে গড়ে ২.৩ মিলিসেকেন্ড করে বাড়ছে।
এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ নির্ভর করছে পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক নীতির ওপর, যেটি হলো কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ। পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের কক্ষপথের কৌণিক ভরবেগ বাড়ে, আর সেই কারণেই চাঁদ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে।
এর ফলে কী হতে পারে?
যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের এই সরে যাওয়ার গতি নিয়ে এ মুহূর্তে উদ্বেগের কিছু নেই, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এর কিছু পরিণতি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
ভবিষ্যতে দিনের দৈর্ঘ্য অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। জোয়ার-ভাটার তীব্রতা হ্রাস পেতে পারে, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির পরিবর্তন পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
মহাজাগতিক নিয়মেরই অংশ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে এই প্রাকৃতিক সম্পর্ক কেবল আমাদের গ্রহেই নয়, বরং মহাবিশ্বের বহু গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যেই দেখা যায়। এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই ঘটে চলেছে।
তবে চাঁদের এই ধীরে ধীরে সরে যাওয়া ভবিষ্যতে পৃথিবীর ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে গবেষণা এখনো চলছে।
সূত্র: NDTV