HELATH

রক্তদান করলে ১০ মিনিটেই ৫০০ ক্যালোরি ক্ষয় হয়? কী বলছেন চিকিৎসকরা?

রক্তদান নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। মানবতার সেবায় যারা স্বেচ্ছায় রক্ত দেন, তাঁদের সম্মান জানাতেই প্রতি বছর ১৪ জুন পালিত হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।

তবে সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে—রক্তদান করলে মাত্র ১০ মিনিটেই ৫০০ থেকে ৬৫০ ক্যালোরি বার্ন হয়! অনেকেই এ তথ্য বিশ্বাস করছেন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটি আদৌ সত্যি কি না?

চলুন শুনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কী বলছেন।

বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কতটা?

ভারতের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ও পেইন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কুণাল সুদ সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে এই বিষয়টি নিয়ে মত দিয়েছেন। তিনি জানান, রক্তদানের পর শরীর কিছুটা শক্তি ব্যবহার করে ঠিকই, কারণ নতুন রক্তকণিকা তৈরি করতে হয়। কিন্তু এটিকে “ক্যালোরি বার্ন” বা “ওজন কমানোর উপায়” হিসেবে দেখা ভুল ধারণা।

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন,

“অনেকে বলে থাকেন, রক্তদান করলে ৫০০ ক্যালোরি খরচ হয়। শুনতে ভালো লাগলেও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটা জিমে ব্যায়াম করার মতো নয়।”

শরীরে কী ঘটে রক্তদানের পর?

ডা. সুদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী:

রক্তদানের সময় শরীর থেকে প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন লাল রক্তকণিকা বের হয়ে যায়।

এই কণিকাগুলো আবার তৈরি হয় অস্থিমজ্জায় (Bone marrow)।

প্রতিদিন প্রতিনিয়ত শরীর প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০ লাখ নতুন রক্তকণিকা তৈরি করে।

এই প্রক্রিয়ায় শরীর শক্তি ব্যবহার করে ঠিকই, তবে সেটা সাধারণ অর্থে “ক্যালোরি খরচ” নয়।

তাহলে রক্তদানের উপকারিতা কী?

ওজন কমানোর কোনো সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও, রক্তদানের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক।

ডা. সুদের মতে:

রক্তদানে অতিরিক্ত আয়রনের মাত্রা কমে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক।

এটি রক্তের স্বাভাবিক গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ওজন কমানোর উপায় না হলেও, রক্তদান একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, যা এর সবচেয়ে বড় গুণ।

তিনি আরও যোগ করেন,

“রক্তদানকে কখনোই জিমের বিকল্প ভাবা উচিত নয়। এটি এক মানবিক কাজ—স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে ঠিকই, তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এর সামাজিক ও মানবিক গুরুত্ব।”

শেষ কথা

রক্তদান করলে শরীর কাজ করে ঠিকই—নতুন রক্ত তৈরি করে, কিছুটা শক্তি ব্যয় হয়। কিন্তু সেটাকে ৫০০ ক্যালোরি ক্ষয় বা ব্যায়ামের সমান ভাবা একেবারেই ভুল। এটি কোনো ওজন কমানোর কৌশল নয়, বরং একটি জীবন রক্ষার noble mission।

তাই রক্ত দিন, কিন্তু ভুল তথ্য ছড়িয়ে নয়—সচেতনভাবে।

সূত্র: দ্য ওয়াল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button